অাকাশ ইতিহাস ডেস্ক:
আজ মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল ২০১৮ সাল
ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ।
তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে দৈনিক আকাশের পাঠকদের জন্য নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’।
৮ এপ্রিল, ২০১৮, মঙ্গলবার। ২৫শে বৈশাখ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। একনজরে দেখে নিন ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস দিবস
৮ মে ১৮২৮ সালে রেডক্রস বা রেড ক্রিসেন্টের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী হেনরি ডুনান্টের জন্ম । ২৪ জুন ১৮৫৯ ৷ স্থান ইতালির সলফেরিনো। অস্ট্রিয়া আর ফ্রান্সের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে। প্রায় ১৬ ঘণ্টাব্যাপী এই যুদ্ধে হতাহত সৈন্য সংখ্যা ৪০ হাজারের মতো । এ সময় সলফেরিনো দিয়ে যাচ্ছিলেন সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী ডুনান্ট। যুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে খুব কাতর করে তোলে। ব্যথিত হয়ে তিনি সেখানকার লোকদের সহায়তায় মৃত সৈন্যদের সৎকার করেন। সেবা-শশ্রুষা করেন আহতদের। যুদ্ধের ভয়াবহতা তার মনে এমন প্রভাব ফেলেছিলো, তিনি সুইজারল্যান্ডে ফিরেই একটি বই লেখেন- এ মেমোরি অব সলফেরিনো। বইটি ১৮৬২ সালে প্রকাশিত হয় । এই গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে আহবান জানান এমন একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য যেখান থেকে পক্ষ-বিপক্ষ সব আহতই সেবা পেতে পারে। হেনরি ডুনান্টের আহবানে সাড়া দেয় জেনেভার পাবলিক ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি। পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় কমিটি অব ফাইভ। এর পরপরই বিশে^র ১৬টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বসে ১৮৬৩ র ২৬ অক্টোবর। এই সম্মেলনেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিশ্বের আর্তমানুষের সেবায় নিবেদিত সংস্থা রেডক্রস। আর রেডক্রসের প্রতীক চিহ্ন নির্বাচন করা হলো সুইজারল্যান্ডের পতাকা থেকে। তারপর আর পেছন ফেরা নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে রেডক্রসের সেবা কার্যক্রম। আজও চলছে।
রেডক্রস আর রেড ক্রিসেন্ট নাম ও প্রতিক ভিন্নতা থাকলেও সংস্থা কিন্তু একই
রেডক্রসকে কেনো রেড ক্রিসেন্ট হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয় তার ইতিহাস হলো রাশিয়া আর তুরস্কের মধ্যে একটা যুদ্ধ হয়েছিলো ১৮৭৬ সালে। ওই সময় তুরস্ক রেডক্রস চিহ্নিত পতাকা ব্যবহারের অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদের জাতীয় পতাকার আদলে রেড ক্রিসেন্ট চিহ্নিত পতাকা ব্যবহার করে। তখন থেকেই মুসলিম দেশগুলোতে রেডক্রসের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্ট নাম এবং প্রতীক ব্যবহার শুরু হয়। এটি অবশ্য কোনো সিদ্ধ নিয়ম নয়। বিশ্বের যে কোনো দেশ পছন্দ অনুযায়ী রেডক্রস অথবা রেড ক্রিসেন্ট যে কোনো নাম ব্যবহর করতে পারে । বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। ৩১ মার্চ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। ৩১ মার্চ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি অ্যাক্ট ১৯২০ বাতিল করেন। সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ আন্তর্জাতিক রেডক্রসের তেহরান সম্মেলনে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ এর ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আদেশের সংশোধনী বলে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রাখা হয়। সেই থেকে রেড ক্রিসেন্ট প্রতীকের ব্যবহারও শুরু হয় ।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সকল কর্মকান্ডে এবং এর গঠনতন্ত্রে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি প্রতিফলিত হয়। সোসাইটির সদর দপ্তর সরাসরি এবং ইউনিটের মাধ্যমে যেসব সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছে তার মধ্যে রয়েছে দুর্যোগ-ত্রাণের ক্ষেত্রে উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা, সীমিত সাধারণ চিকিৎসা, সম্পূরক খাদ্য, জরুরি খাদ্য, কাপড়-শীত বস্ত্র, গৃহস্থলী, অস্থায়ী আশ্রয়, গৃহ তহবিল ইত্যাদি। স্বাস্থ্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে হাসপাতাল, মাতৃসদন হাসপাতাল, গ্রামীণ মাতৃসদন ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র পরিচালনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সার্ভিস, রক্ত কর্মসূচি এবং পরিবার পরিকল্পনা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপন কর্মসূচির ক্ষেত্রে কম্যুনিটি ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচি, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, কম্যুনিটি সার্ভিস প্রোগ্রাম, প্রশিক্ষণ, অনুসন্ধান, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি।
*ইতিহাসের এই দিনে ফ্রান্সের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক গোস্তাভ ফ্লোবার দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছিলেন। তিনি ১৮২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং আইন বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেন। তিনি বাস্তববাদী ছিলেন এবং তার লেখা উপন্যাস ও রচনা সামগ্রীতে সমাজেরই বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। তার কয়েকটি বিখ্যাত বাইয়ের মধ্যে সালাম্বু ও ম্যাডাম বুওয়ারির নাম উল্লেখ করা যায়।
১৯০২ সালের এই দিনে দক্ষিণ ফ্রান্সে অবস্থিত একটি পাহাড় থেকে বিকট শব্দে হাঠৎ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ায় সেন পিয়ারে নামের একটি শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এই অগ্ন্যুৎপাতের ধ্বংস ক্ষমতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে ৩০ হাজার লোক নিহত হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ঐ পাহাড়টি নিস্ক্রিয় অবস্থায় আছে।
* ১৮৪৫ সালের ৮ই মে জার্মানীর নাৎসী বাহিনী বিনা শর্তে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করায় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অবসান ঘটে। ১৯৪৩ সাল থেকেই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানীর পতন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর রাশিয়া জার্মানীর ভুখন্ড পর্যন্ত সেনা সমাবেশ ঘটায় এবং পূর্ব ইউরোপ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯৪৫ সালে রাশিয়া জার্মানীর রাইন নদী অতিক্রম করে এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পশ্চিমা মিত্র বাহিনীও জার্মানীর বার্লিন শহরে প্রবেশ করে। বার্লিন শহর পতনের প্রাক্কালে হিটলার আত্মহত্যা করে এবং নাৎসি দলের বহু নেতা গ্রেফতার হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ নিহত হয়েছিল এবং বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
এই দিনে ইরানের বিখ্যাত কবি আবু ইসহাক কাসাঈ মার্ভযি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৩৯১ হিজরীতে বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানের অন্তর্গত প্রাচীন ইরানের মার্ভ শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র বংশধর বা আহলে বাইতের বিশেষ করে হযরত আলী(আঃ) এর প্রশংসা করে বহু কবিতা রচনা করেছেন। আবু ইসহাক কাসাঈ মার্ভযি চমৎকার উপমাসহ কবিতার অর্থ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও পারদর্শী ছিলেন।
আজ থেকে ১০৪ বছর আগে ইরানের বিশিষ্ট আলেম “মীর্জা ইয়াহিয়া বিদ অবদি ইস্পাহানী” মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তৎকালীন সময়ের অন্যতম সেরা আলেম শেইখ মোর্তাজা আনসারির সান্নিধ্যে থেকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মীর্জা ইয়াহিয়া বিদ অবদি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন এবং এর মধ্যে “তাফজিলুল আয়েম্মা আলাল মালায়েকে” নামক বইয়ের কথা উল্লেখ করা যায়।
* হিজরী ৪১৩ সালের জমাদিউল আওয়াল মাসের দুই তারিখে বিখ্যাত মুসলিম সাহিত্যিক ও আরবী ক্যালিওগ্রাফার” আবুল হাসান আলী বিন হেলাল বাগদাদী” মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ইবনে বাবব নামে পরিচিত। তিনি চমৎকার আরবী ক্যালিওগ্রাফী লিখতে পারতেন এবং এ শিল্পে নতুন পদ্ধতি বা ধারা সৃষ্টি করেন। তার অতি মূল্যবান একটি শিল্পকর্ম হচ্ছে হাতে লেখা একটি কোরআন শরীফ যা বর্তমানে লন্ডনে সংরক্ষিত আছে।
* ১৮২৮ সালের এই দিনে রেডক্রসের প্রতিষ্ঠাতা সুইজারল্যান্ডের হেনরি ডুরার জন্ম দিন ছিল। ১৮৬৩ সালের ২৬শে অক্টোবর বিশ্বের ১৬টি দেশ নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আর্ত মানবতার সেবায় রেডক্রস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
* আজ ছিল নোবেল বিজয়ী বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দিন। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কোলকাতায় জোড়াসাকো ঠাকুর বাড়িতে তার জন্ম হয়েছিল। গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থ লেখার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। বাংলা সাহিত্যে তিনিই ছিলেন প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
- মুসলমানদের গৌড় বিজয় (৭২৬)
- প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী বসুর জন্য (১৮৬১)
- ভারতে প্রথম রেডক্রস দিবস উদযাপন (১৮৬৩)
- রুমানিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা (১৯২১)
- কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন (১৯৬২)
- পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদ ও খন্দকার মোশতাক দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার (১৯৬৬)
- জ্যাক শিরাক ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত (১৯৯৫)