ঢাকা ১২:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিদিন নদী সাঁতরে অফিসে যান যিনি

অাকাশ আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:

যানজট পেড়িয়ে কিম্বা গরমে বাসে টিউবে ঠাসাঠাসি করে ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছানো খুব একটা সহজ কথা নয়।আর এ কারণেই জার্মানির মিউনিখে বসবাসকারী বেনিয়ামিন ডাভিডের বিনা টেনশনে অফিসে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন এক অভিনব প্রন্থা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি- প্রতিদিন তিনি সাঁতার কেটে অফিসে যান। খবর বিবিসির।

তার মতে বাসে-গাড়িতে যাওয়ার ঝক্কি ঝামেলা বেশি। তাই তিনি আল্পস পর্বতমালায় থেকে উৎপত্তি হওয়া ইসার নদীতে সাঁতার কেটে খুব সহজে ও ঠিক সময়ে পৌঁছে যান অফিসে।গ্রীষ্মকালে এর পানির তাপমাত্রা থাকে ১৪ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির তাপমাত্রা দেখেই তিনি ঠিক করেন কি পোশাক পরে তিনি নদীতে নামবেন।প্রতিদিন সকালে তিনি তার ল্যাপটপ, জামা কাপড় আর জুতা একটি ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগের ভেতরে ভরে অফিসের জন্যে নেমে যান নদীতে।

তারপর ‘মেরিলি মেরিলি মেরিলি’ (অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে) ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যান দুই কিলোমিটার দূরের অফিসে। নদীর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটিতে সকালে প্রচুর গাড়ি থাকে।
ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া তার কাছে খুবই ঝামেলার মনে হয়। তিনি বলেন, সেকারণে আমি বাসে বা গাড়িতে করে অফিসে যাই না। যাই আমার শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে সাঁতার কেটে।

তার চেয়ে সাঁতার কেটে যাওয়াই ভালো। কারণ আমি খুব দ্রুত ও টেনশন ছাড়াই অফিসে পৌঁছে যেতে পারি। গ্রীষ্মকালের সময় প্রতিদিনই সাঁতার কেটে অফিসে যান। বিশেষ করে ওই তিন মাস। সেসময় তিনি সাঁতার কেটে বাড়িতেও ফেরেন। শুধু তাই নয়, শীতের সময়েও তিনি কখনো কখনো সাঁতরাতে সাঁতরাতে অফিসে চলে যান। কিন্তু সবসময় নয়। অফিসে যাওয়ার জন্যে তার আছে বিশেষ একটি ব্যাগ। তার ভেতরে থাকে তোয়ালে ও কাপড় চোপড়।

এর ভেতরে সবকিছু নিয়ে মুড়িয়ে মুখটা বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয়, সাঁতার কাটতেও এই ব্যাগটি তাকে সাহায্য করে। এটি ফুলে পিঠের সঙ্গে লেগে থাকায় পানিতে ভেসে থাকতে সুবিধা হয়।এভাবে অফিসে যাওয়া শুরু করার আগে তার মনে একটাই প্রশ্ন ছিলো যে শরীর না ভিজিয়ে কিভাবে তিনি সেখানে যেতে পারেন। এটাই ছিলো তার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি জানান, সাঁতরে অফিসে যাওয়ার পথে তিনি পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরেন। এই স্যান্ডেল জোড়া তাকে নদীতে পরে থাকা অনেক কিছু থেকে রক্ষা করে।তবে প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে যে কাজটা তিনি অবশ্যই করেন সেটা হলো নদীতে পানির উচ্চতা, তাপমাত্রা, স্রোতের গতি এসব তিনি ইন্টারনেটে পরীক্ষা করে নেন।

তিনি জানান, প্রতিদিনই তিনি যখন অফিসে যান তখন লোকজন রাস্তার দু’পাশে কিম্বা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে তাকে দেখেন এবং কেউ কেউ হাসাহাসিও করেন।তিনি জানান, অনেকে তাকে দেখে সাঁতার কাটার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান, নদীটিকে জলপথ হিসেবে ব্যবহার করার দেড়শ’ বছর পূর্তিতে তার মাথায় এভাবে অফিসে যাওয়ার ধারণাটি আসে।এরপর তার অনেক সহকর্মীও তার সাথে সাঁতার কেটেছেন দেখার জন্যে যে এভাবে অফিসে যেতে কেমন লাগতে পারে।

তিনি বলেন, রোম ও ভিয়েনাতে যাওয়ার জন্যে এই ইসার নদীর একসময় ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। লোকজন নৌকায় করে চলাচল করতো। কিন্তু গত একশ’ বছরে এসব কিছু হারিয়ে গেছে।এখন আর কেউ ইসার নদীকে ব্যবহার করে না। তাই আমি নিজেই প্রতিদিন ঝাঁপিয়ে পড়ি। এবং পৌঁছে যাই অফিসে। আমি অবাক হবো না যদি আগামী বছরে দেখি আরো বহু মানুষ এ নদীতে সাঁতার কেটেই অফিসে যাচ্ছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

যুব এশিয়া কাপ জয়ীদের মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কার দেবে বিসিবি

প্রতিদিন নদী সাঁতরে অফিসে যান যিনি

আপডেট সময় ০২:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০১৭

অাকাশ আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:

যানজট পেড়িয়ে কিম্বা গরমে বাসে টিউবে ঠাসাঠাসি করে ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছানো খুব একটা সহজ কথা নয়।আর এ কারণেই জার্মানির মিউনিখে বসবাসকারী বেনিয়ামিন ডাভিডের বিনা টেনশনে অফিসে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন এক অভিনব প্রন্থা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি- প্রতিদিন তিনি সাঁতার কেটে অফিসে যান। খবর বিবিসির।

তার মতে বাসে-গাড়িতে যাওয়ার ঝক্কি ঝামেলা বেশি। তাই তিনি আল্পস পর্বতমালায় থেকে উৎপত্তি হওয়া ইসার নদীতে সাঁতার কেটে খুব সহজে ও ঠিক সময়ে পৌঁছে যান অফিসে।গ্রীষ্মকালে এর পানির তাপমাত্রা থাকে ১৪ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির তাপমাত্রা দেখেই তিনি ঠিক করেন কি পোশাক পরে তিনি নদীতে নামবেন।প্রতিদিন সকালে তিনি তার ল্যাপটপ, জামা কাপড় আর জুতা একটি ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগের ভেতরে ভরে অফিসের জন্যে নেমে যান নদীতে।

তারপর ‘মেরিলি মেরিলি মেরিলি’ (অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে) ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যান দুই কিলোমিটার দূরের অফিসে। নদীর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটিতে সকালে প্রচুর গাড়ি থাকে।
ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া তার কাছে খুবই ঝামেলার মনে হয়। তিনি বলেন, সেকারণে আমি বাসে বা গাড়িতে করে অফিসে যাই না। যাই আমার শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে সাঁতার কেটে।

তার চেয়ে সাঁতার কেটে যাওয়াই ভালো। কারণ আমি খুব দ্রুত ও টেনশন ছাড়াই অফিসে পৌঁছে যেতে পারি। গ্রীষ্মকালের সময় প্রতিদিনই সাঁতার কেটে অফিসে যান। বিশেষ করে ওই তিন মাস। সেসময় তিনি সাঁতার কেটে বাড়িতেও ফেরেন। শুধু তাই নয়, শীতের সময়েও তিনি কখনো কখনো সাঁতরাতে সাঁতরাতে অফিসে চলে যান। কিন্তু সবসময় নয়। অফিসে যাওয়ার জন্যে তার আছে বিশেষ একটি ব্যাগ। তার ভেতরে থাকে তোয়ালে ও কাপড় চোপড়।

এর ভেতরে সবকিছু নিয়ে মুড়িয়ে মুখটা বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয়, সাঁতার কাটতেও এই ব্যাগটি তাকে সাহায্য করে। এটি ফুলে পিঠের সঙ্গে লেগে থাকায় পানিতে ভেসে থাকতে সুবিধা হয়।এভাবে অফিসে যাওয়া শুরু করার আগে তার মনে একটাই প্রশ্ন ছিলো যে শরীর না ভিজিয়ে কিভাবে তিনি সেখানে যেতে পারেন। এটাই ছিলো তার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি জানান, সাঁতরে অফিসে যাওয়ার পথে তিনি পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরেন। এই স্যান্ডেল জোড়া তাকে নদীতে পরে থাকা অনেক কিছু থেকে রক্ষা করে।তবে প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে যে কাজটা তিনি অবশ্যই করেন সেটা হলো নদীতে পানির উচ্চতা, তাপমাত্রা, স্রোতের গতি এসব তিনি ইন্টারনেটে পরীক্ষা করে নেন।

তিনি জানান, প্রতিদিনই তিনি যখন অফিসে যান তখন লোকজন রাস্তার দু’পাশে কিম্বা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে তাকে দেখেন এবং কেউ কেউ হাসাহাসিও করেন।তিনি জানান, অনেকে তাকে দেখে সাঁতার কাটার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান, নদীটিকে জলপথ হিসেবে ব্যবহার করার দেড়শ’ বছর পূর্তিতে তার মাথায় এভাবে অফিসে যাওয়ার ধারণাটি আসে।এরপর তার অনেক সহকর্মীও তার সাথে সাঁতার কেটেছেন দেখার জন্যে যে এভাবে অফিসে যেতে কেমন লাগতে পারে।

তিনি বলেন, রোম ও ভিয়েনাতে যাওয়ার জন্যে এই ইসার নদীর একসময় ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। লোকজন নৌকায় করে চলাচল করতো। কিন্তু গত একশ’ বছরে এসব কিছু হারিয়ে গেছে।এখন আর কেউ ইসার নদীকে ব্যবহার করে না। তাই আমি নিজেই প্রতিদিন ঝাঁপিয়ে পড়ি। এবং পৌঁছে যাই অফিসে। আমি অবাক হবো না যদি আগামী বছরে দেখি আরো বহু মানুষ এ নদীতে সাঁতার কেটেই অফিসে যাচ্ছেন।