কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় মরুভূমিতেও চাষ উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। আমি আগে বলতাম লবণের মাটিতে ধান চাই, এখন আমি বলছি- মরুভূমিতেও ধান উৎপাদন চাই।
শনিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১৬-১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যতই কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, দেশের প্রয়োজনে সেই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে ফসল ফলানোর চ্যালেঞ্জ আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীদের নিতে হবে। অর্থাৎ সবচেয়ে কম পানিতে বেশি ফলন দেয় এমন ধানের জাত আমরা চাই। এজন্য বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও রোগবালাইসহ প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, কম পানিতে বেশি ধান উৎপাদন এবং উত্তরাঞ্চলকেন্দ্রিক পরিবর্তে ধান চাষাবাদকে দক্ষিণাঞ্চলকেন্দ্রিক করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মতিয়া বলেন, আমি কিন্তু কম স্বাদে বলেনি উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নামছে। এভাবে চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চলে পানিনির্ভর চাষাবাদ ব্যাপক ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। এত পানি খরচ করে কতদিন বোরো করব- তা চিন্তা করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রয়োজন কী? দেশের প্রয়োজনে- তা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কম পানিতে কীভাবে বেশি ধান উৎপাদন করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। পানির অর্থনীতি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আগে শুধু বোরো জাত উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হতো। বর্তমানে আউশ ও আমনের ওপর জোর দিচ্ছি। বোরো কিন্তু ইনকিউবেটর বেবি। বোরো উৎপাদনে পানির খরচও বেশি।
এ সময় ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, গত মৌসুমে শুধু বন্যার পানিই যে ফসল উৎপাদনে ক্ষতি করেছে- তা নয়; ব্লাট রোগেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। যেখানে ৫০ মণ করে ধান হতো, সেখানে তা ৪০ মণে নেমে এসেছে। সব জায়গায় এ ক্ষতি হয়নি, তবে কিছু জায়গায় হয়েছে। এতে মোট উৎপাদনে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। তাই ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে। এ ব্যাপারে আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাই না।
এ সময় তিনি ব্রি উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি কেন মাঠপর্যায়ে সমাদৃত হচ্ছে না সেদিকেও বিজ্ঞানীদের নজর দিতে বলেছেন।
গাজীপুরের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শুরু হওয়া এ কর্মশালা শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবির ইকরামুল হক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসীন।
এতে বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনার নানা তথ্য তুলে ধরে ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৬-১৭’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তমাল লতা আদিত্য। ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী এতে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনগুলোতে গত এক বছরে ব্রি’র ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হবে।