অাকাশ জাতীয় ডেস্ক:
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন- কারিগরি শিক্ষার প্রসাবর ঘটানোর মাধ্যমে আমারা ‘এক ঢিলে দুই পাখি শিকার’ করতে পারি। দেশের তরুণ সমাজকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত কারা মাধ্যমে আমরা তাদেরকে পরিবর্তনশীল শ্রম বাজারের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারি, পাশাপাশি আমাদের বিকাশমান শিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির সরবরাহও নিশ্চিত করতে পারি। শুক্রবার (২৮ জুলাই ২০১৭) ইনস্টিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ আয়োজিত কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নিবন্ধ উপস্থাপনের সময় ড. আতিউর এ কথা বলেন।
ঢাকায় ইনস্টিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের ভবনে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী কনফারেন্সের শুক্রবার ছিল দ্বিতীয় দিন। কনফারেন্সের এ অধিবশেনের প্রধান অতিথি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীও তার বক্তব্যে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষাকে যথাযথ মাত্রায় অন্তর্ভূক্ত করার ওপর জোর দেন। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ অধিবশনে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি জনাব শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষ জনবলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বাংলাদেশ যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর, ড. আতিউর তার নিবন্ধে সমাধানের কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রথমত, নীতি নির্ধারকদের কেবল সঙ্গতিপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়নে সীমাবদ্ধ না থেকে কারিগরি শিক্ষার মানের দিকেও মনযোগ দিতে হবে, যাতে করে কারিগরি ডিগ্রী পাওয়া তরুণরা তাদের কাঙ্খিত চাকরি পেতে পারে। দ্বিতীয়ত, নীতি প্রণয়ন করতে হবে সুনির্দিষ্ট গবেষণার ভিত্তিতে, এবং এসব গবেষণায় শিক্ষার মান ও বাজারে শ্রমের চাহিদার ওপর বিশেষ মনযোগ দিতে হবে। তৃতীয়ত, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে যে কোন নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অবশ্যই সেখানে ব্যক্তি খাতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থত, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্ব বাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে সংস্কার করতে হবে। এবং পঞ্চমত, নীতি নির্ধারকদের পাশাপাশি পড়ালেখা শেষ করা তরুণদের মন-মানসিকতাতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে করে তারা ডেস্কে বসে করা যায় এমন চাকুরিকেই একমাত্র আরাধ্য মনে না করে এবং কারিগরি ও প্রায়োগিক পেশাগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে ড. আতিউর বলেন- বিশ্বায়নকে বিবেচনায় রেখে সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাতেই ব্যাপকভিত্তিক পরিবর্তন আনতে হবে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও বিশ্ব বাজারের চাহিদাকে মাথায় রাখতে হবে। এ জন্য আমাদের তরুণদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে যাতে তারা শ্রম বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে। এর ফলে শিক্ষা খাতের বিনিয়োগও সুরক্ষিত হবে। এর পাশাপাশি তিনি কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যসূচি প্রণয়নের সময় আরও বেশি মাত্রায় বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
এমনটি করা গেলে প্রশিক্ষিত তরুণরা আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিত্য নতুন ধারণাকে উৎসাহিত করতে হবে, বিনিয়োগ করতে হবে গবেষণা ও উন্নয়নে।