ঢাকা ০৫:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজা এখন গোরস্থানে পরিণত : জাতিসংঘ

আকাশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

গাজা এখন একটি গোরস্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানকার জীবিতরা খাবারের জন্যে প্রতিনিয়ত আহাজারি করছে। এক টুকরো গরম অথবা বিশুদ্ধ খাবার তাদের জন্যে কল্পনার বিষয়। জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মকর্তারা শুক্রবার এসব কথা জানান।

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ/আগ্রাসনের ৭৫তম দিবসে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা সেখানকার অবিশ্বাস্য-ভয়ংকর পরিস্থিতি জানানোর সময় আরো উল্লেখ করেন, একদিকে হাঁড় কাপানো শীত, অতিবৃষ্টি, অপরদিকে ইসরায়েলি বর্বরতা গাজার মানুষদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

খাদ্য সংকট, চিকিৎসা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, পুরো উত্তর গাজাকে একটি কবরস্থান বললেও অত্যুক্তি হবে না বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মীরা।

ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রতিনিধি লুইস ওয়াটারিজ বলেন, গাজাবাসীর সাথে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা বিশ্ব দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না। এহেন অবস্থায় কোনো মানুষ বাস করতে পারেন না।

গত শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর অঝোর ধারার বৃষ্টির পর গাজার নুসেইরাত থেকে ভার্চুয়ালে কথা বলার সময় ইউএনআরডব্লিউএ’র কর্মকর্তা লুইস আরো উল্লেখ করেন, এখানকার পুরো একটি সমাজব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন হয়ে কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এখনো ২০ লাখের মতো মানুষ আটকা পড়েছে ইসারায়েলি লাগাতার হামলার মধ্যে। তাদের পক্ষে পালিয়ে আত্মরক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে নিপতিত মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট চরমে উঠেছে। মৌলিক চাহিদার কিছুই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে সবগুলো পথ আটকে পড়া মানুষদের মৃত্যুর দিয়ে ধাবিত করছে।

একই পরিস্থিতির আলোকপাত করে ইউনিসেফের কর্মকর্তা রোজালিয়া বোলেন জানান, ছিটমহলেও আটকে পড়া মানুষেরা দুর্ভিক্ষের শিকার। সেখানে গাজার ৯৬% এর অধিক নারী-শিশু রয়েছে। তারা নিশ্চিত মৃত্যুর পথে। ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করা সম্ভব না বলে অসহায় মানুষেরা মৃত্যুকে আলিঙ্গণে বাধ্য হবেন।

আম্মান থেকে রোজালিনা বোলেন আরো জানান, গাজার সবচেয়ে উত্তরের অংশটি ৭৫দিন ধরেই অবরোধের মধ্যে। এটি ১০ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতেও প্রতিনিয়ত বাধা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ভোগ শুরু শারীরিক নয়, মানসিকও। শিশুরা শীতে কাতরাচ্ছে, এমন অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে ভিজছে, পায়ে জুতা-স্যান্ডেলও নেই, অনেক শিশুকে দেখেছি যারা এখনো গ্রীস্মের পোশাক পরে এবং রান্নার গ্যাস চলে যাওয়ায় অনেকে আবর্জনার স্তুপের মধ্যে ময়লা ফেলার প্লাস্টিক খুঁজছে, পুড়িয়ে শীত নিবারনের চেষ্টায়।

এর আগের দিন বৃহস্প্রতিবার উত্তর গাজা কর্তৃপক্ষের একটি অনুরোধ নাকচ করে দেয় ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। অনুরোধটি ছিল অবরুদ্ধ এলাকায় পানি ও খাদ্য সরবরাহের। জাতিসংঘ আশা করেছিল মানবেতর পরিস্থিতিতে নিপতিতদের প্রতি ইসরায়েলিদের সদর আচরণ পাবে। কিন্তু সেটি ঘটেনি। এ অবস্থায় বেইট হ্যানোন, বেইট লেহিয়া এবং জাবারিয়ার ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম খাদ্য পাওয়া থেকেও চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জাতিসংঘের ত্রাণ এবং মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থার (ওসিএইচএ) কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজা এখন গোরস্থানে পরিণত : জাতিসংঘ

আপডেট সময় ১১:৩০:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আকাশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

গাজা এখন একটি গোরস্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানকার জীবিতরা খাবারের জন্যে প্রতিনিয়ত আহাজারি করছে। এক টুকরো গরম অথবা বিশুদ্ধ খাবার তাদের জন্যে কল্পনার বিষয়। জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মকর্তারা শুক্রবার এসব কথা জানান।

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ/আগ্রাসনের ৭৫তম দিবসে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা সেখানকার অবিশ্বাস্য-ভয়ংকর পরিস্থিতি জানানোর সময় আরো উল্লেখ করেন, একদিকে হাঁড় কাপানো শীত, অতিবৃষ্টি, অপরদিকে ইসরায়েলি বর্বরতা গাজার মানুষদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

খাদ্য সংকট, চিকিৎসা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, পুরো উত্তর গাজাকে একটি কবরস্থান বললেও অত্যুক্তি হবে না বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মীরা।

ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রতিনিধি লুইস ওয়াটারিজ বলেন, গাজাবাসীর সাথে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা বিশ্ব দেখার প্রয়োজন বোধ করছে না। এহেন অবস্থায় কোনো মানুষ বাস করতে পারেন না।

গত শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর অঝোর ধারার বৃষ্টির পর গাজার নুসেইরাত থেকে ভার্চুয়ালে কথা বলার সময় ইউএনআরডব্লিউএ’র কর্মকর্তা লুইস আরো উল্লেখ করেন, এখানকার পুরো একটি সমাজব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন হয়ে কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এখনো ২০ লাখের মতো মানুষ আটকা পড়েছে ইসারায়েলি লাগাতার হামলার মধ্যে। তাদের পক্ষে পালিয়ে আত্মরক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে নিপতিত মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট চরমে উঠেছে। মৌলিক চাহিদার কিছুই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে সবগুলো পথ আটকে পড়া মানুষদের মৃত্যুর দিয়ে ধাবিত করছে।

একই পরিস্থিতির আলোকপাত করে ইউনিসেফের কর্মকর্তা রোজালিয়া বোলেন জানান, ছিটমহলেও আটকে পড়া মানুষেরা দুর্ভিক্ষের শিকার। সেখানে গাজার ৯৬% এর অধিক নারী-শিশু রয়েছে। তারা নিশ্চিত মৃত্যুর পথে। ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করা সম্ভব না বলে অসহায় মানুষেরা মৃত্যুকে আলিঙ্গণে বাধ্য হবেন।

আম্মান থেকে রোজালিনা বোলেন আরো জানান, গাজার সবচেয়ে উত্তরের অংশটি ৭৫দিন ধরেই অবরোধের মধ্যে। এটি ১০ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতেও প্রতিনিয়ত বাধা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ভোগ শুরু শারীরিক নয়, মানসিকও। শিশুরা শীতে কাতরাচ্ছে, এমন অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে ভিজছে, পায়ে জুতা-স্যান্ডেলও নেই, অনেক শিশুকে দেখেছি যারা এখনো গ্রীস্মের পোশাক পরে এবং রান্নার গ্যাস চলে যাওয়ায় অনেকে আবর্জনার স্তুপের মধ্যে ময়লা ফেলার প্লাস্টিক খুঁজছে, পুড়িয়ে শীত নিবারনের চেষ্টায়।

এর আগের দিন বৃহস্প্রতিবার উত্তর গাজা কর্তৃপক্ষের একটি অনুরোধ নাকচ করে দেয় ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। অনুরোধটি ছিল অবরুদ্ধ এলাকায় পানি ও খাদ্য সরবরাহের। জাতিসংঘ আশা করেছিল মানবেতর পরিস্থিতিতে নিপতিতদের প্রতি ইসরায়েলিদের সদর আচরণ পাবে। কিন্তু সেটি ঘটেনি। এ অবস্থায় বেইট হ্যানোন, বেইট লেহিয়া এবং জাবারিয়ার ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম খাদ্য পাওয়া থেকেও চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জাতিসংঘের ত্রাণ এবং মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থার (ওসিএইচএ) কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।