আকাশ জাতীয় ডেস্ক :
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচার ছাড়া এবং যারা আমাদের ওপর ডিরেক্টলি (সরাসরি) গুলি চালিয়েছিল তাদের বিচার ছাড়া আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাব না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বুধবার কাউন্সিলর সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্র গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সিটি কর্পোরেশন ও পৌর কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবি ও বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে এ কাউন্সিলর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাসিকের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিদ আলম, বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু, সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম কিবরিয়া, পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদ প্রমুখ।
সদ্য অপসারণ করা কাউন্সিলরদের উদ্দেশে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। যারা আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, আপনাদের (কাউন্সিলর) এই সমাবেশে আসতে বাধ্য করেছে, সেই শেখ হাসিনার বিচার ব্যাতিত আওয়ামী লীগের বিচার ব্যাতিত এবং যারা আমাদের ওপর ডিরেক্টলি গুলি চালিয়েছিল তাদের বিচার ব্যাতিত আমরা আর কোন ইলেকশনে যাব না। আপনাদেরকে কমিটমেন্টে আসতে হবে, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ যারা নষ্ট করেছে, আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থা যারা নষ্ট করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গত ১৫ বছরে যে মানুষগুলো জেলে অকাতরে জীবন দিয়েছিল, গুম হয়েছিল, খুন হয়েছিল, পঙ্গুত্ববরণ করেছিল তাদের ন্যায্য হিসসা ব্যাতিত আগামীতে কোনো দল বা পক্ষ যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আমরা মনে করব তারা জাতীয় শত্রু। তারা জনগণের কাছে বেঈমান হিসেবে হিসেবে পরিচিত হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, আগামীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ও বৈষম্য বিরোধীর নেতৃত্বে যে একটি রাজনৈতিক দল আসছে; সে রাজনৈতিক দলে আপনাদের আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা আশা করি সেই রাজনৈতিক দলে আপনাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার মূল্যায়ন করব। জনতা এবং মানুষের মধ্যে যে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক সেখানে আমরা আপনাদের পাশে পাব। এই কমিটমেন্টের মধ্যে যদি আমরা যেতে পারি তাহলে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী দল আমরা উপহার দিতে পারব।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কাউন্সিলররা শুধু নয়টা পাঁচটা অফিস করেন না, তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলররা তিন কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। ওই তিন কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আজকে যদি আপনাদেরকে (কাউন্সিলর) সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জনগণের সেই অবস্থান ভুল প্রমাণিত হবে। অতি দ্রুত এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কাউন্সিলরদেরকে পুনর্বহালের জন্য এলজিইডি উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান হাসনাত।
জনগণ এলাকার কাউন্সিলরদের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে চায় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তাদেরকে কখনও আপনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারের কাছে পাঠাতে পারবেন না। একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার তার রুটিন কাজ সম্পন্ন করে জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক কাউন্সিলর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় অনেকে জেলে যেতে হয়েছে। আমি অনেককেই চিনি যারা, জেলে থেকে থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। ওই মানুষগুলোকে আমরা সম্মান জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি এখানে যারা রয়েছেন, সবাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি। এটা যদি না হত তারা কখনোই আমাদের সামনে সেমিনার রুমে আসতো না। আমাদের এই ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে আমরা অবশ্যই কাজ করব।
সমাবেশে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বহাল রেখে সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের বাতিল করা গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার ও আমলারা এখনও বহাল তবিয়তে।
তিনি বলেন, যে আমলারা আওয়ামী লীগের দালালি করেছেন তাদেরকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দায়িত্ব দেওয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, কমিটি গঠন করে যারা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের বেনিফিশিয়ারি কাউন্সিলর বা জনপ্রতিধিদের আছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের তালিকা করতে হবে। যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন সেসব জনপ্রতিনিধিদের বহাল রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা জনগণের হাজার হাজার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দেড় দশক ধরে আন্দোলন করে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। জনগণের পাশে থেকে সারাজীবন রাজনীতি করেছি। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্ষুচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে থেকেছি। রাজপথে থেকেই ছাত্র-জনতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছি। যারা ফ্যাসিবাদের সমর্থক যারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী তাদের পদচ্যুত করার পক্ষে আমরা। কিন্তু আমরা যারা ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যার বিপক্ষে রাজপথে সোচ্চার ছিলাম তাদেরকে অনতিবিলম্বে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় পুনর্বহাল করা হোক। সারাদেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে ফ্যাসিবাদের সমর্থক আমলাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে সিটি কর্পোরশন ও পৌরসভা নিরাপদ নয়। জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে; সাধারণ মানুষ সেবা না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু বলেন, আমরা চাইলে ঢাকায় ৫০ লাখ মানুষ সমবেত করতে পারি। কিন্তু আমরা এসব করতে চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই।
তিনি বলেন, আমাকে রাজপথ থেকে গ্রেফতার করে ভাতের হোটেলের হারুন গুম করে রেখেছিল। আমার এক হাত ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি।