আকাশ নিউজ ডেস্ক :
অসাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য পরিচিত Deinococcus radiodurans যা ‘কোনান দ্য ব্যাকটেরিয়া’ নামেও পরিচিত। তেজস্ক্রিয়তাকে পরাস্ত করতে সক্ষম এই বিরল জীব। এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের জন্য প্রাণঘাতী তেজস্ক্রিয়ার মাত্রার ২৮,০০০ গুণ সহ্য করতে পারে।
সম্প্রতি গবেষকরা এর রহস্যময় শক্তির মূল চাবিকাঠি হিসেবে একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আবিষ্কার করেছেন, যা মহাকাশ অভিযান এবং পৃথিবীতে মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। ৯ ডিসেম্বর প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার তেজস্ক্রিয়ারোধী ক্ষমতা এর বিশেষ উপাদানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এই উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফেট এবং একটি ক্ষুদ্র অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে তৈরি পেপটাইড। এই তিনটি উপাদান মিলে ব্যাকটেরিয়াটিকে তেজস্ক্রিয়ার বিরুদ্ধে অসাধারণ সুরক্ষা দেয়।
গবেষণার সহ-লেখক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রসায়নবিদ ব্রায়ান হফম্যান বলেন, আমরা বহুদিন ধরে জানি যে ম্যাঙ্গানিজ আয়ন এবং ফসফেট একত্রে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট তৈরি করে। তবে এই দুই উপাদানের সঙ্গে তৃতীয় উপাদান যুক্ত হলে এর শক্তি যে এত বেশি বৃদ্ধি পায়, তা আবিষ্কার আমাদের জন্য এক বিরাট অগ্রগতি।
এই গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মহাকাশে তেজস্ক্রিয়ারোধী সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি এবং পৃথিবীতে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়ার প্রভাব কমাতে ব্যবহৃত হতে পারে।
কোনান দ্য ব্যাকটেরিয়ার শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা এর আগে থেকেই সুপরিচিত। এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে তেজস্ক্রিয়তাসহিষ্ণু জীব হিসেবে স্বীকৃত। এমনকি এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরে তিন বছর বেঁচে থাকার সক্ষমতা দেখিয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া চরম ঠাণ্ডা, পানিশূন্যতা এবং উচ্চ অ্যাসিডিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে।
গবেষকরা জানান, এই নতুন আবিষ্কার আগের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বিজ্ঞানী মাইকেলি ড্যালির সঙ্গে ব্রায়ান হফম্যানের আগের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছিল যে এই ব্যাকটেরিয়া হয়তো লাখ লাখ বছর ধরে মঙ্গল গ্রহে টিকে থাকতে সক্ষম। সেখানে এটি একই ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট দ্বারা সুরক্ষিত ছিল।
এই ব্যাকটেরিয়ার রহস্যময় ক্ষমতা শুধু গবেষকদের মুগ্ধ করেনি, বরং মানবজাতির জন্য ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নতুন আশা জাগিয়েছে।