আকাশ জাতীয় ডেস্ক :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাড়ি থেকে আদালতে আইনি হেফাজতে যাওয়ার পথে একটি হত্যা মামলার দুই আসামিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী পেকুয়ায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তাদের দিনভর জিম্মি করে ব্যাপক মারধর করা হয়।
একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা দুজনকে ফেলে দেয় পেকুয়ার সড়কের ধারে। তার মধ্যে একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় মারা যান। অপরজন পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলার লালব্রিজ নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক দুজনকে অপহরণ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলা সদর এলাকায়। সেখানে অজ্ঞাত স্থানে দিনভর পিটুনির পর সন্ধ্যার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সড়কের ধারে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। এরপর খবর পেয়ে পেকুয়া থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চকরিয়া থেকে অপহরণের পর পেকুয়ায় পিটুনিতে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম ধলা মিয়া প্রকাশ দানু মিয়া (৫০)। তিনি মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মাহারাপাড়ার মো. কলমদরের পুত্র। গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুশয্যায় থাকা ব্যক্তির নাম মো. মুবিন (২৫)। তিনি চকরিয়া উপজেলার কোনখালী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের চড়া পাড়ার ছাবের আহমদের পুত্র।
অপহরণের পর পিটুনিতে মারা যাওয়া ধলা মিয়ার কন্যা শিফা আক্তার জানান, তাকে চকরিয়ার কোনাখালীতে বিয়ে দেওয়া হয়। সেই সুবাদে বাবা ধলা মিয়াও তার সঙ্গে থাকতেন; কিন্তু ২০২৩ সালের পহেলা ডিসেম্বর চকরিয়ার কোনখালী এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে খুন হন পেকুয়ার কলেজ শিক্ষার্থী আসহাবুল করিম জিহাদ। সেই জিহাদ হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ১২ আসামির সঙ্গে তার বাবাকেও আসামি দেওয়া হয়। ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী চকরিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন তার বাবা ধলা মিয়াসহ তিন আসামি। তার মধ্যে বাবা ধলা মিয়া ও মুবিন চকরিয়া সদরের দিকে রওনা দিলে পথিমধ্যে তাদের গতিরোধ করে জোরপূর্বক সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে পার্শ্ববর্তী পেকুয়া সদরের একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী।
স্থানীয়দের ফোন পেয়ে পেকুয়ার সড়কের ধার থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার পরবর্তী পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
চকরিয়া থানার ওসি মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, পেকুয়ার কলেজ শিক্ষার্থী আসহাবুল ইসলাম জিহাদ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ধাওয়া দেয় একদল লোক। সেখান থেকে দুই আসামি ধলা মিয়া ও মুবিন নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন। ৯৯৯ মারফত খবর পেয়ে লালব্রিজ এলাকা থেকে হত্যা মামলার অপর আসামি মোবারক আলীকে কিছু মানুষের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে আদালতের রিকল জমা দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওসি চকরিয়া বলেন, নিহতের লাশ মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নিয়ে আসার পর তা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরিবারের দাবি অনুযায়ী ধলা মিয়া ও মুবিনকে অপহরণের পর পিটুনিতে হতাহতের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।