আকাশ জাতীয় ডেস্ক :
অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, সামষ্টিক অর্থনীতি, সুদহার একজন সাধারণ ভোক্তার কাছে মূল্যহীন। তার কাছে খুব বেশি অর্থবহ খাবারের প্লেটে কী কী ছাড় দিতে হচ্ছে! জীবনযাত্রার ব্যয়ে আমার কী কী বিষয়ের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে! তাই রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি মানুষকে স্বস্তি দেওয়া উপদেষ্টা পরিষদের মৌলিক দায়িত্ব। পুরো উপদেষ্টা পরিষদ এ ব্যাপারে অসম্ভব রকমের সংবেদনশীল।
এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। তিনি আকিজ বশির গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে আমার কোনো দ্বিমত নেই। যদি কোনো ব্যক্তি পতিত সরকারের লোক হয় তাহলে তার এ অবস্থানে আসার নৈতিক অবস্থানই থাকার কথা নয়। সাদা এবং কালো বিভক্ত করে সমাজকে অনেক বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি স্বৈরাচারের দোসর ছিলাম কি ছিলাম না বর্তমান সময়ে এখন বের করা খুব সহজ। কিন্তু আমাকে কারও সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে আমার ওপরে জুলুম করা হচ্ছে।
সরকারের নবনিযুক্ত উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমরা দেখেছি সিন্ডিকেট হয়েছে। একটা নির্দিষ্ট অংশের (সার্টেন কোয়ার্টার) মধ্যে বাণিজ্যের একটা খুব বড় অংশ একত্র হয়ে গেছে। আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দিন দিন কমেছে। আমাকে পরিণামদর্শিতার সঙ্গে যথাযথভাবে জিনিসটাকে পরিচালনা করতে হবে এবং মানুষের জন্য স্বস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও অনেক বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করার একমাত্র রাস্তা অনেক বেশি মানুষকে বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা। যারা এ প্রতিযোগিতার বাইরে ছিল, তাদের দ্রুত যুক্ত করতে হবে। অনেকের ব্যক্তি সক্ষমতা আছে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নেই। জুলুমের কারণে সেসব ক্ষমতা ভেঙে গেছে।
এগুলো ফেরত আনতে হবে। তবে এটা রাতারাতি করা একটু জটিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি এসব বিষয় কাজ করতে খুবই আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, আদর্শগতভাবে আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিনিময়ে অসম্ভব প্রয়োজনীয় জিনিস একটা (সুশাসন) চাই। যদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা এমনভাবে তৈরি করতে পারি, যার ফলে সুশাসন সহজ হয় এবং দুঃশাসনকে জটিল করা যায়। তিনি বলেন, একটা মানুষ আর্থিক খাতে যে ক্ষতি করেছেন, বিচারা বিভাগে যে ক্ষতি করেছেন, পুলিশসহ যতগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব পালিয়ে গেছেন! বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা সম্ভাবনাকে চিন্তা করতে চাই। সম্ভাবনাকে ধরতে চাই, তার জন্য আমাদের নিয়ামকগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানির জন্যও তৈরি করতে হবে। রেমিট্যান্স ভালো এলেও আমাদের রপ্তানি আয় যথেষ্ট না। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও সামাজিকভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম। কথা বলতে পারতাম না, একজন আরেকজনকে ভয় পেতাম। সুস্পষ্ট বিচারহীনতার মধ্যে বাস করতাম। তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপরীতে ছাত্রলীগের যে পরিমাণ নৈরাজ্য আমরা দেখেছি, ব্যবসাবাণিজ্যে একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছিল- সেটা আমরা পূরণের চেষ্টা করছি। আমার ধারণা, বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। যতটুকু বাকি আছে সেটাও বেড়ে যাবে। আমরা একটা ইনসাফভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছি। সেখানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে হতাশা এড়িয়ে যাওয়া। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে অর্থনীতিতে একটা নৈতিবাচক প্রভাব অবশ্যই ফেলবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
সেখ বশির উদ্দিন আরও বলেন, সমাজ, পরিবার, ব্যবসা, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সবকিছু মিলেই আমাদের জীবন। বাণিজ্যে আরও বেশি অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতার এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে সিন্ডিকেটের চিহ্ন যেন না থাকে। এ সময় তিনি জানান, বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়েছে, এতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক জোগানের সমন্বয় ছিল না। ফলে বাজারে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ অস্থিরতা কাটিয়ে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। যদিও কিছু ব্যাংকে অস্থিরতা রয়েছে, গ্রাহককে টাকা দিতে পারছে না। এটাও কেটে যাবে। এর কারণ ওই ব্যাংকগুলো কিছু অনর্থক কাজ করেছে। মুদ্রা পাচারের কারণে অর্থনীতির গর্ত তৈরি হয়েছে।