আকাশ জাতীয় ডেস্ক :
বিয়ের আশ্বাসে অবৈধ সম্পর্ক। এরপর বিয়ে না করে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া। সেই সাথে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া বন্ধ করা-এসব কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন মাসুম (৬২)। হত্যার পর সাত টুকরা করে লাশ গুম করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এমন রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ঘাতক রুমা আক্তার। তিনি ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার তাতরাকান্দা গ্রামের নজর আলীর মেয়ে। তিনি ও তার বান্ধবী ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার কানিকশালগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল হকের মেয়ে রোকসানা ওরফে রুকু মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
তারা দুজনই শেওড়াপাড়া এলাকার ডা. হাবিবুল্লাহর বাড়ির ভাড়াটিয়া। হত্যার পর পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকের পাড়ে কালো পলিথিনের ব্যাগে করে ফেলে দেওয়া হয়। তারা দুইজনই ইতিমধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হায়দার আলীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
জবানবন্দিতে রুমা উল্লেখ করেন, জসিম উদ্দিন তাকে বিয়ে করবে বলে সম্পর্ক তৈরি করে। এরপর কাফরুলের শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে তাকে রাখে। মাসে মাসে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতো জসিম। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ রুমা জানতে পারে জসিম অন্য এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। তাকে বিয়ে না করা এবং অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোয় রুমার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ক্ষোভ থেকেই সে জসিম উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পর লাশ গুমে তাকে সহায়তা করে বান্ধবী রোকসানা রুকু।
অপরদিকে, রুকু তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, জসিমের সঙ্গে রুমার সম্পর্কের বিষয়টি রুকু জানতো। জসিমকে হত্যার পর বিষয়টি রুমা তাকে জানিয়ে লাশ গুমের জন্য সহায়তা কামনা করে। তখন সে লাশ গুমে তাকে সহায়তা করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার এসআই রোকনুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে শুক্রবার তাদের আদালতে আনা হয়। এরপর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আরও অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানান, রুমার সঙ্গে মাসুমের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর শেওড়াপাড়া রুমার ভাড়া বাসায় মাসুমকে প্রথমে দুধের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ খণ্ড খণ্ড করে পাঠাওয়ের গাড়িযোগে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন রুমা।
এর আগে, গত বুধবার সকালে পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকে হাতমুখ ধোয়ার সময় দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে পলিথিন মোড়ানো লাশ দেখতে পান স্থানীয় এক রিকশাচালক। পরে পলিথিনের ব্যাগের ভেতর থেকে জসিম উদ্দিন মাসুমের মরদেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করা হয়।
প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা হলেও পরে মো. জসিম উদ্দিন মাসুমের লাশ শনাক্ত করা হয়। তিনি ফতুল্লার চাঁদ ডায়িংয়ের মালিক।
নিহত ব্যবসায়ীর ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, গত রবিবার বিকেলে প্রাইভেটকার নিয়ে বের হন জসিম উদ্দিন। গুলশানে নিজের গাড়িটি ছেড়ে দেন। অন্য আরেকটি গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ যাবেন বলে চালককে জানান। ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তবে রাতে তিনি বাসায় ফেরেননি।
পরের দিন সকালে তার দুটি মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কোথাও খোঁজ না পেয়ে রাতে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা। বুধবার পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে এসে তারা জসিমের মরদেহ শনাক্ত করেন।