ঢাকা ০২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত আ.লীগ নেতারা ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে চাই : ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা তা সম্পূর্ণরূপে জনগণের সিদ্ধান্ত: মির্জা ফখরুল ফ্যাসিস্টদের মতো কারও কথা বলার অধিকার হরণ করা হবে না : প্রেস সচিব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা উদ্যোক্তা তৈরির পরিবর্তে চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে : ড. মুহাম্মদ ইউনূস সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ রাজধানীর দয়াগঞ্জে অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ দুধ দিয়ে গোসল করে ৩৫ আন্দোলন থেকে সরে গেলেন আহ্বায়ক শুভ গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ৮ কর্মকর্তাকে

নাম লোগো পোশাক পরিবর্তন, নতুন আইনে পরিচ্ছন্ন বাহিনী হবে র‌্যাব

আকাশ জাতীয় ডেস্ক :

পরিচ্ছন্ন বাহিনী হিসাবে ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। পুলিশ অধ্যাদেশের অধীনে প্রায় ২০ বছর ধরে চলে আসা বাহিনীটির নাম, লোগো ও পোশাকের পরিবর্তন আনার কাজ চলছে। পাশাপাশি বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আইনও প্রণয়ন করা হবে। র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, র‌্যাব রাখারই কোনো যৌক্তিকতা নেই। র‌্যাবকে বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। আবার কেউ বলছেন, সংস্কার করে আইনি কাঠামোর মধ্যে রেখে র‌্যাবকে পরিচালনা করা যেতে পারে।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালে এলিট ফোর্স র‌্যাব গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১৫ বছরে এই বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে চরম সমালোচনা তৈরি হয়। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ ওঠে বাহিনীটির বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা থেকে শুরু করে কক্সবাজারের কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়া পর্যন্ত বহু বিতর্কিত ঘটনা এই বাহিনীটির খ্যাতিকে নষ্ট করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা র্যাব সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দাবি আরও জোরালো হয়।

এদিকে গত ২৭ আগস্ট গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠন করে সরকার। এই কমিশনের কাছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনার অভিযোগ জানানোর সুযোগ ছিল। ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনে ১৬শ গুমের অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এসব অভিযোগের মধ্যে কমিশন ৪০০ অভিযোগ যাচাই করে। তার মধ্যে ১৭২টি গুমের অভিযোগে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা পায়। এছাড়া সিটিটিসির বিরুদ্ধে ৩৭টি, ডিজিএফআইর বিরুদ্ধে ২৬টি, ডিবির বিরুদ্ধে ৫৫টি, পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি ঘটনার প্রমাণ পায়। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, র‌্যাবের বিরুদ্ধেই গুমের অভিযোগ বেশি।

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, র‌্যাবের সংস্কারের কোনো প্রয়োজন নেই। এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে। এই বাহিনী এখন বিলুপ্ত করে দেওয় উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশই যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, বাহিনীটি বিলুপ্ত করে দেওয়ার বিষয়ে অতীতেও আমি মত দিয়েছি। তিনি বলেন, গুম কমিশন এখন পর্যন্ত র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুমের ১৭২টি অভিযোগ পেয়েছে, যা কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে ৪৬৭টি কথিত বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাব সরাসরি জড়িত ছিল।

মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, একজন মানবাধিকারকর্মী হিসাবে আমি মনে করি র‌্যাবকে বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় র্যাব বিলুপ্ত করার দাবি উঠেছে। তিনি বলেন, পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ঠিক না থাকলে সংস্কার করে কোনো কাজ হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার পরিবর্তে আইনি কাঠামোর অধীনে এনে তাদের কাজগুলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নাগরিক অধিকারের প্রেক্ষাপটে যদি পরিচালিত করা যায় তাহলে সব দিক থেকে স্বস্তি দেবে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে র‌্যাবে যেসব ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

র‌্যাবের লিগাল মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার লে. কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, বাহিনীটির নাম, পোশাক এমনকি নিয়ম-কানুনেরও পরিবর্তন এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতদিন র‌্যাব পুলিশ অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ছিল না কোনো আইন। এখন র‌্যাবের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, নতুন আইনের খসড়ায় বাহিনীর প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম, নিয়োগ, পদায়ন এবং শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই আইনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, আসামি গ্রেফতার এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষমতাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশকে হারিয়ে শেষটা রাঙাতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ

নাম লোগো পোশাক পরিবর্তন, নতুন আইনে পরিচ্ছন্ন বাহিনী হবে র‌্যাব

আপডেট সময় ০২:২৫:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

আকাশ জাতীয় ডেস্ক :

পরিচ্ছন্ন বাহিনী হিসাবে ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। পুলিশ অধ্যাদেশের অধীনে প্রায় ২০ বছর ধরে চলে আসা বাহিনীটির নাম, লোগো ও পোশাকের পরিবর্তন আনার কাজ চলছে। পাশাপাশি বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আইনও প্রণয়ন করা হবে। র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, র‌্যাব রাখারই কোনো যৌক্তিকতা নেই। র‌্যাবকে বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। আবার কেউ বলছেন, সংস্কার করে আইনি কাঠামোর মধ্যে রেখে র‌্যাবকে পরিচালনা করা যেতে পারে।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালে এলিট ফোর্স র‌্যাব গঠন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১৫ বছরে এই বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশে-বিদেশে চরম সমালোচনা তৈরি হয়। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ ওঠে বাহিনীটির বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা থেকে শুরু করে কক্সবাজারের কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহত হওয়া পর্যন্ত বহু বিতর্কিত ঘটনা এই বাহিনীটির খ্যাতিকে নষ্ট করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা র্যাব সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দাবি আরও জোরালো হয়।

এদিকে গত ২৭ আগস্ট গুমসংক্রান্ত কমিশন গঠন করে সরকার। এই কমিশনের কাছে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গুমের ঘটনার অভিযোগ জানানোর সুযোগ ছিল। ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কমিশনে ১৬শ গুমের অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এসব অভিযোগের মধ্যে কমিশন ৪০০ অভিযোগ যাচাই করে। তার মধ্যে ১৭২টি গুমের অভিযোগে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা পায়। এছাড়া সিটিটিসির বিরুদ্ধে ৩৭টি, ডিজিএফআইর বিরুদ্ধে ২৬টি, ডিবির বিরুদ্ধে ৫৫টি, পুলিশের বিরুদ্ধে ২৫টি ঘটনার প্রমাণ পায়। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, র‌্যাবের বিরুদ্ধেই গুমের অভিযোগ বেশি।

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, র‌্যাবের সংস্কারের কোনো প্রয়োজন নেই। এই বাহিনী গঠন করা হয়েছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে। এই বাহিনী এখন বিলুপ্ত করে দেওয় উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশই যথেষ্ট বলে মনে করেন তিনি।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, বাহিনীটি বিলুপ্ত করে দেওয়ার বিষয়ে অতীতেও আমি মত দিয়েছি। তিনি বলেন, গুম কমিশন এখন পর্যন্ত র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুমের ১৭২টি অভিযোগ পেয়েছে, যা কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে ৪৬৭টি কথিত বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাব সরাসরি জড়িত ছিল।

মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, একজন মানবাধিকারকর্মী হিসাবে আমি মনে করি র‌্যাবকে বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। দেশে-বিদেশে বহু জায়গায় র্যাব বিলুপ্ত করার দাবি উঠেছে। তিনি বলেন, পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ঠিক না থাকলে সংস্কার করে কোনো কাজ হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার পরিবর্তে আইনি কাঠামোর অধীনে এনে তাদের কাজগুলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নাগরিক অধিকারের প্রেক্ষাপটে যদি পরিচালিত করা যায় তাহলে সব দিক থেকে স্বস্তি দেবে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে র‌্যাবে যেসব ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

র‌্যাবের লিগাল মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার লে. কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, বাহিনীটির নাম, পোশাক এমনকি নিয়ম-কানুনেরও পরিবর্তন এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতদিন র‌্যাব পুলিশ অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ছিল না কোনো আইন। এখন র‌্যাবের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, নতুন আইনের খসড়ায় বাহিনীর প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম, নিয়োগ, পদায়ন এবং শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই আইনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, আসামি গ্রেফতার এবং অপরাধ তদন্তের ক্ষমতাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।