আকাশ জাতীয় ডেস্ক :
শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ থামছেই না। রোববার একদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ১৫০ পয়েন্ট কমেছে। আর ৫ আগস্টের পর সূচক কমেছে ১ হাজার ৫০ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন কমেছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘদিন পর সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে। সব হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব। টানা দরপতনে পুরো বাজার বিপর্যস্ত। কমছে তারল্য প্রবাহ। আসছে না নতুন বিনিয়োগ। দেখার যেন কেউ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ক্রেতাশূন্য বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। এ কারণে কমছে দাম। এ অবস্থায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো মার্জিন ঋণ সমন্বয়ের জন্য ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) করছে। এতে পতন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্বের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পারছে না। এ কারণে রোববারও বাজারে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে তারা পতনের কারণ খতিয়ে দেখছে।
এদিকে রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিএসইর নেতারা।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এ দরপতন অস্বাভাবিক। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। ইতোমধ্যে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পতনের কারণ খতিয়ে দেখবে। চিহ্নিত করবে গুজব সৃষ্টিকারীদের। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সুপারিশ করবে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে পরপর কয়েকদিন ইতিবাচক হয় বাজার। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এ সময়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (বিএসইসি) পরিবর্তন আসে। একজন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দিয়ে পরের দিন আবার পরিবর্তন করা হয়। পরে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা একেবারেই অনভিজ্ঞ। বাজারের ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই। বাজারের অনেক পরিভাষাই তারা বুঝেন না। নতুন কমিশনের বেশকিছু সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কিত। স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ গঠনসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। বিষয়টি বাজারসংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে নেননি। ফলে টানা দরপতন শুরু হয়।
১১ আগস্ট ডিএসইর মূল্যসূচক ছিল ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট। বুধবার পর্যন্ত তা কমে ৫ হাজার ১৬০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসাবে ২ মাসে সূচক ৮৫৫ পয়েন্ট কমেছে। ওই সময়ে গড় লেনদেন ছিল ৭০০ কোটি টাকায়। কিন্তু বর্তমানে তা ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১১ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা কমে ৬ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, আলোচ্য সময়ে বাজার মূলধন ৬৬ হাজার কোটি টাকা কমেছে। মৌলভিত্তিসম্পন্ন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে ভিন্নকথা। যারা আগে বাজারে কারসাজি করেছিল, তাদের বেশকিছু লোকজনের ব্যাপারে বিএসইসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে ওই চক্রটি বাজারে পরিকল্পিতভাবে পতন ঘটাচ্ছে।
এককদিন হিসাবে রোববার ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানির ১৪ কোটি ৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩৪১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। ডিএসই ব্রডসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই ৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১০৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
এছাড়া ডিএসইর বাজার মূলধন আগের চেয়ে কমে ৬ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। সিএসইতে রোববার ২০৪টি কোম্পানির ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬টি কোম্পানির, কমেছে ১৭১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টির শেয়ারের দাম। সিএসই এক্স সূচক ১৬৬ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৫৩৯ পয়েন্ট এবং সার্বিক সূচক ২৭৪ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ২৮ পয়েন্টে নেমেছে।
এদিকে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে তার অফিসে রোববার সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ডিএসইর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান আয়কর আইনে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করলে কর দিতে হয়। এতে তাদের করের হার অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ যারা ৩০ শতাংশ হারে কর দেন, তাদের সারচার্জসহ করের হার ক্ষেত্রবিশেষে সাড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারবিমুখ হয়েছেন। সামগ্রিকভাবে বাজারে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে লেনদেন কমছে। ফলে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি করা হয়। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে ডিএসই।
এনবিবার চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবের বিষয়গুলো সম্পর্কে তিনি অবহিত। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে এ ব্যাপারে শিগ্গিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডিএসইর পক্ষে পরিচালক অধ্যাপক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, মো. শাকিল রিজভী এবং রিচার্ড ডি রোজারিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।