ঢাকা ০৬:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছয় বছরে ব্যয় বেড়েছে ৯৩ কোটি ডলার

আকাশ জাতীয় ডেস্ক: 

বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। প্রথমত, ঋণ বাড়ায় সুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সুদ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০০ কোটি ডলার সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ছয় বছর আগে এ খাতে ব্যয় ছিল মাত্র ৭ কোটি ডলার। বর্তমানে এ খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ একশ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হতে পারে। গত মার্চ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছিল ৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে ৭৬ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৯৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ ১৪ দশমিক ২৮ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ কমে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৪ হাজার ৮০৮ কোটি ডলার।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক ঋণ নেওয়াটা সীমিত পরিমাণে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়নির্ভর প্রকল্পে নেওয়া ভালো। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় দিয়ে ঋণ পরিশোধ সহজ হবে। কিন্তু কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশের বেসরকারি ও সরকারি খাত বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটিও এসব ঋণ ব্যাপক হারে অনুমোদন দিয়েছে। বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রকল্পে। এসব প্রকল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে না। ফলে এখন ডলার সংকটের মধ্যে ওইসব ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে।

সূত্র জানায়, দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ বেশি পড়ে, বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ কম-এই যুক্তিতে উদ্যোক্তা বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার নীতিমালা জারি করে। ফলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা বিদেশি ঋণ নিতে থাকে। এর আগে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ খুবই কম ছিল। কেবল সরকারি খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নেওয়া হতো। সরকারি খাতের ঋণের সুদও অনেক কম ছিল। বেসরকারি খাতের ঋণের সুদের হার ৬ শতাংশ হলেও বর্তমানে টাকার মান কমে যাওয়ায় এর হার বেড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে মূল ঋণ ১ হাজার ২৭ কোটি ডলার। সুদ বাবদ বকেয়া আছে ১৪৬ কোটি ডলার। এসব সুদের একটি অংশ চলতি অর্থবছরেই পরিশোধ করতে হবে। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ ১০২ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছয় বছরে ব্যয় বেড়েছে ৯৩ কোটি ডলার

আপডেট সময় ১১:২৪:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

আকাশ জাতীয় ডেস্ক: 

বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। প্রথমত, ঋণ বাড়ায় সুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সুদ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০০ কোটি ডলার সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ছয় বছর আগে এ খাতে ব্যয় ছিল মাত্র ৭ কোটি ডলার। বর্তমানে এ খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ একশ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হতে পারে। গত মার্চ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছিল ৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে ৭৬ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৯৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ ১৪ দশমিক ২৮ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ কমে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৪ হাজার ৮০৮ কোটি ডলার।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক ঋণ নেওয়াটা সীমিত পরিমাণে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়নির্ভর প্রকল্পে নেওয়া ভালো। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় দিয়ে ঋণ পরিশোধ সহজ হবে। কিন্তু কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশের বেসরকারি ও সরকারি খাত বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটিও এসব ঋণ ব্যাপক হারে অনুমোদন দিয়েছে। বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রকল্পে। এসব প্রকল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে না। ফলে এখন ডলার সংকটের মধ্যে ওইসব ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে।

সূত্র জানায়, দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ বেশি পড়ে, বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ কম-এই যুক্তিতে উদ্যোক্তা বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার নীতিমালা জারি করে। ফলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা বিদেশি ঋণ নিতে থাকে। এর আগে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ খুবই কম ছিল। কেবল সরকারি খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নেওয়া হতো। সরকারি খাতের ঋণের সুদও অনেক কম ছিল। বেসরকারি খাতের ঋণের সুদের হার ৬ শতাংশ হলেও বর্তমানে টাকার মান কমে যাওয়ায় এর হার বেড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে মূল ঋণ ১ হাজার ২৭ কোটি ডলার। সুদ বাবদ বকেয়া আছে ১৪৬ কোটি ডলার। এসব সুদের একটি অংশ চলতি অর্থবছরেই পরিশোধ করতে হবে। চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ ১০২ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।