আকাশ নিউজ ডেস্ক:
স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে উচাইল শাহী মসজিদ। যেটাকে আবার অনেকেই ‘গায়েবি মসজিদ’ আবার ‘লালটিলা মসজিদ’ হিসেবেও বলে থাকেন। সুলতানি আমলের শত-শত বছরের পুরোনো মসজিদটি যেন উচাইলবাসির কাছে এক ঐতিহ্যের প্রতীক। মসজিদটির অবস্থান হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের উচাইল শংকরপাশা গ্রামে। চমৎকার কারুকাজ আর নির্মাণশৈলী নিয়ে প্রায় ৬ একর জমির উপর মসজিদ, দিঘি আর কবরস্থান রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উন্নতমানের প্রলেপহীন পোড়া ইট কেটে সেঁটে দেওয়া হয়েছে ইমারতে। দেয়ালের বাইরের অংশে পোড়া ইটের ওপর বিভিন্ন নকশা এবং অলঙ্করণ সহজেই মুসল্লি ও দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মসজিদটি লাল বা রক্তিম বলে অনেকে ‘লাল মসজিদ’ বলে থাকেন। আর এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে শত-শত মানুষ সেখানে ভীড় জমায়। অনেককেই আবার সেখানে গিয়ে জিকির আসকার ও মোনাজাত করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫১৩ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন শাহ মজলিশ আমিন (রা.)। পরবর্তীতে মসজিদের সুদৃশ্য ইমারত বা ভবন নির্মাণ করা হয় সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের আমলে। ইমারতটির দৈর্ঘ ও প্রস্থ একই মাপের (২১ ফুট ৬ ইঞ্চি)। বারান্দা ৩ ফুটের সামান্য বেশি। একে অনেক সময় চার গম্বুজ মসজিদও বলা হয়। কেননা মূল বা আসল ভবনের ওপর একটি বড় বা বিশাল গম্বুজ এবং বারান্দার ওপর দেখতে পাওয়া যায় তিনটি ছোট গম্বুজ। দরজা-জানালা আছে প্রায় ১৫টি। দরজা ও জানালা প্রায়সবগুলো একই আকৃতির। সব দিকের দেয়ালের পুরুত্বই বেশি। তিন দিকের পুরুত্ব প্রায় ৫ ফুট। পশ্চিম দিকের দেয়ালের পুরুত্ব এর প্রায় দ্বিগুণ বা প্রায় ১০ ফুট। মোট ৬টি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ আছে প্রধান কক্ষের চার কোণে ও বারান্দার দুই কোণে। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ নির্মাণ করা হয়েছে বাঁকানোভাবে। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে বড় দীঘি। এটি মসজিদটির সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলোতে এখানে বেশি ভিড় হয়। তবে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শত-শত বছরের পুরোনো মসজিদটি এখন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, প্রাচীন মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা। তারা বলেন, প্রতিদিনই মসজিদটি দেখতে ও এখানে মাজার জিয়ারত করতে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। প্রাচীন আমলের বিভিন্ন কারুকাজে সাজানো মসজিদটি সাধারণ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও মসজিদের বাইরে ও ভেতরের বিভিন্ন অংশে আরবি হরফের লেখা রয়েছে। যা বর্তমান সময়ে বিরল। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের অভাবে এসব লেখার অনেক কিছুই এখন অস্পষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে, সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অযুখানাসহ বেশ কিছু স্থানে সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হয়েছে। মসজিদের চার পাশেই লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। যা সুগদ্ধ ছড়াচ্ছে মসজিদে আসা মুসল্লীসহ দর্শনার্থীদের মধ্যে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা রাজিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল করিম দুলাল জানান, উচাইল শাহী মসজিদটি আমাদের গ্রামের নয় পুরো জেলার ঐতিহ্য। আর ঐহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদটিতে আসা যাওয়া একমাত্র রাস্তাটিতে সংস্কার কাজ চলছে। প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যায়ে এ সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, যেহেতু মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাই সেখানে বেশি কিছু আমাদের করার নেই। তবে মসজিদের বাহিরের অংশে অযুখানাসহ বেশ কিছু স্থাপনার সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে।