আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
নিরপেক্ষ নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানোর ফল ভালো হবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে সরকারের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
শনিবার বিকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে নারায়ণগঞ্জে গুলিতে নিহত যুবদলকর্মী শাওন হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিএনপি অফিসের আমনে আসতে থাকেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর আগেই ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয় সমাবেশটি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, অন্যায় করলে যে শাস্তি পেতে হয় বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যুবদল নেতা শাওনসহ বিএনপি নেতাকর্মী হত্যার বিচার হবে। দেশের জনগণ একদিন প্রধানমন্ত্রীসহ এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুলিশেরও বিচারের ব্যবস্থা করবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ কোনো টালবাহানা মেনে নেবে না। শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকার এখন চাপে আছে। তার প্রমাণ মিলেছে কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেটের বক্তব্যে।
‘দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে উল্লেখ করে মিশেলের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব বিশেষ একটি বার্তা বহন করে’—যোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে গণতন্ত্র, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠানো ও অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। এবারও একইপথে হাঁটছে। আবারও নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা ও হামলা করা হচ্ছে। পুলিশকে দিয়ে গুলি করিয়ে বিএনপিকে দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবক্ষেত্রে মিথ্যাচার অব্যাহত রাখলেও তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে প্রমাণ মেলে তারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছে। নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সচিত্র প্রতিবেদনে প্রমাণ মিলেছে যে শাওনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়েরের কঠোর প্রতিবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরাও মামলা করব। মামলায় কিছু হয় কিনা তা এখন পুলিশপ্রধান ভালোভাবে বুঝতে পারছেন। শর্তসাপেক্ষে পুলিশপ্রধানের জাতিসংঘের সমাবেশে যোগ দেওয়া লজ্জার বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বক্তব্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানান ফখরুল। এছাড়া তিনি দলের নেতাকর্মীদের মাঠে থেকে প্রতিরোধের আহ্বানও জানান।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বিএনপি। এই চেষ্টায় তিনি দেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।
স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কোনোভাবে আর বর্তমান সরকারকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের আর বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।