আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলা মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ভিজিটর রোকেয়া বেগমের নিজ বাসায় গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মারা যাওয়া সেই তিন সন্তানের জননী রেহানা বেগমের জীবনের মূল্য চার লাখ ধরে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টাকাটা নিহত রেহানার পরিবারকে দেবেন অভিযুক্ত ভিজিটর রোকেয়া। সোমবার রাতে শালিসের মাধ্যমে স্থানীয় নেতারা এ রায় দেন।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) তার বাসায় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রেহানা বেগম (৪০) নামে এক নারীর গর্ভপাত করাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকে রোকেয়া গা ঢাকা দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, তার বাসায় অবৈধভাবে বিভিন্ন এলাকার নারী গর্ভপাত ঘটান। এতে মৃত্যুঝুঁকি থাকে বলে জানা যায়। রেহানা সালথা উপজেলার কানাইড় গ্রামের কৃষক আজিজুল শেখের স্ত্রী। তার ৩টি মেয়ে রয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে বরিবার (২৮ আগস্ট) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর টনক নড়ে অভিযুক্ত ভিজিটর রোকেয়ার। তিনি তড়িঘড়ি করে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারস্থ হয়ে সোমবার রাত ৮টার দিকে ফরিদপুর শহরের একটি শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে শালিস-মীমাংসায় বসেন। এ সময় তাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেন শালিস-বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।
কালিস-বৈঠকে উপস্থিত থাকা গট্টি ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ফরিদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম নাসির, স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বর, সাবেক ইউপি সদস্য কুদ্দুস মোল্যা, খোরশেদ খান, জাহিদ মাতুব্বরসহ স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রেহানার মৃত্যুর বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। শালিসে চার লাখ টাকা রোকেয়াকে জরিমানা করা হয়। জরিমানার এই টাকা রেহানার অসহায় পরিবার পাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, কি করবো বলেন- রেহানার পরিবার অনেক গরিব। তাই বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে মীমাংসা করে দিলাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ মাতুব্বর বলেন, স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি চার লাখ টাকায় মীমাংসা হয়েছে।
মীমাংসা হওয়ার পর নিহত রেহানার মেয়ে রিক্তা আকতারের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আবার অভিযুক্ত ভিজিটর রোকেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে মীমাংসার আগে রেহানার মেয়ে রিক্তা আকতার অভিযোগ করে বলেছিলেন, আমার মা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ৪০ বছর বয়সে আবার সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি লজ্জাবোধ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে ভিজিটর রোকেয়ার কাছে গেলে তিনি আমার মাকে বাচ্চা গর্ভপাত করার পরামর্শ দেন। তার কথামতো বৃহস্পতিবার রোকেয়ার ফরিদপুর শহরের আলীপুর বাসায় নিয়ে গর্ভপাতের জন্য মাকে প্রথমে ওষুধ খাওয়ান। এতে প্রসব ব্যথা শুরু হলে আমার মা ছটফট করতে থাকেন। এ সময় ৫ হাজার টাকাও নেন রোকেয়া।
তিনি আরো বলেন, এতে মায়ের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। শুক্রবার সকালে রোকেয়া আরো পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে বলেন, তা না হলে তোমার মাকে মেডিকেলে নিয়ে যাও। তার অবস্থা খারাপ। আমি কিছু করতে পারবো না। তখন আমি ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু করার আগেই বেলা ১১টার দিকে আমার মা মারা যান।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, রেহানার মৃত্যুর বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। আপনাদের কাছ থেকেই এখন শুনলাম। তবে রেহানার মৃত্যুর বিষয়ে তার পরিবার থানায় একটি জিডি করেছে। লাশ ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।