আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
মাদারীপুরের কালকিনিতে বসতঘরের চারপাশে দেয়াল তৈরি করে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী কয়েকজন প্রভাশালীর বিরুদ্ধে। এতে তিন বছর ধরে তিনটি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ঘটনায় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌর এলাকার পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মহব্বত আলী চৌধুরীর ছেলে শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জীবিকার তাগিদে ১৫ বছর যাবত সৌদি আরবে থাকেন। তার পরিবারে স্ত্রী আর তিন মেয়ে বসবাস করেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঙ্গাশিয়া গ্রামে। ২০১৬ সালে ওই সৌদি প্রবাসী জমি কিনে নির্মাণ করেন একটি বসতঘর। বাড়ি নির্মাণকালে যাতায়াতের জন্য ৬ ফুটের বেশি রাস্তা ছিল।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে প্রভাবশালী প্রতিবেশী বাদল সরদার ও লিটন সরদার এবং এসকেনদার আলী তাদের জমিতে সৌদি প্রবাসীর বাড়ির চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে দেয়াল টপকে যাতায়াত করতে হয় তাদের। আবার পরিবারের অন্য সদস্যদের পেছনের একটি ছোটপকেট গেট দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সেটিও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তরা।
শুধু শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবারই নয়, একই অবস্থা পাশের ৮০ বছর বয়সী স্বামীহারা আমেনা বেগম ও ইলিয়াস সরদারের পরিবারের। এতে চলাচলে চরম বিড়ম্বনায় পরিবারগুলো।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সৌদি প্রবাসী শহিদুল ইসলাম। পরে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পৌর ভূমি অফিস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জানান, ‘তিনটি পরিবারকে জিম্মির মাধ্যমে উচ্ছেদ করে জায়গাটিতে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। এ জন্য নিরীহ পরিবার তিনটির উপর চলছে এমন অমানবিক নির্যাতন। এর দ্রুত সুরাহা হওয়া দরকার।’ ভুক্তভোগী সৌদি প্রবাসী শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জমি কিনে বাড়ি করার সময় হাঁটাচলার জন্য ৬ ফুটের রাস্তা ছিল। কিন্তু চারদিকে দেয়াল দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তিন বছর ধরে এই অবস্থা চললেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। পরিবারে তিন মেয়ে ও স্ত্রী থাকে। আমি সৌদি আরব থাকায় বেশ ঝামেলায় পড়েছি।’
স্বামীহারা আমেনা বেগম বলেন, ‘ঘর থেকে বের হলেই দেখি দেয়াল। বাজার-সদাই সবকিছু আনতেই সমস্যার মুখে পড়ছি। কেউ এখন পাশে নেই।’
ইলিয়াস হাওলাদারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম বলেন, ‘দেয়াল নির্মাণ করে তারা বলেছে পেছনে সরকারি নতুন রাস্তা হচ্ছে, সেখান দিয়ে যাতায়াত করতে।’
অভিযুক্ত এসকেনদার আলী বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গায় দেয়াল দিয়েছি। অন্য কারো জায়গায় দেয়াল দেইনি। পেছনের দিক দিয়ে সরকারি রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, সেখান দিয়ে ওই পরিবারের লোকজন যাতায়াত করবে। যারা অভিযোগ করেছে, তাদের অভিযোগ সত্য নয়।’
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ও থানার ওসি (তদন্ত) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইমরান খান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন পৌর তহশিলদার ও সার্ভেয়ার পরিদর্শন করেছে। কোনো অবস্থাতেই এই পরিবারগুলোকে জিম্মি হতে দেওয়া হবে না।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন, মেয়র ও কাউন্সিলর মিলে এ সমস্যার একটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’