আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের পক্ষে স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুজন অভিভাবক সদস্যকে বেধড়ক পিটিয়েছেন।
রোববার বিকালে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে। পরে প্রিসাইডিং অফিসার উপজেলা শিক্ষা অফিসের সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ১৮ জুলাই ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবক সদস্য পদে ভোটের মধ্য দিয়ে চারজন অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন।
স্কুলটিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচন ঘিরে কয়েক দিন ধরে হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
রোববার ছিল সভাপতি পদে নির্বাচন। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হন দেওয়ান সাইদুর রহমান ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
তবে এদের কেউই সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও একটি পক্ষ সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের নাম ঘোষণা করে। অপরপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমানের নাম প্রস্তাব করে।
নির্বাচন ঘিরে দুপুর ১টার পর দুপক্ষের লোকজন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। পুলিশ দুপক্ষের লোকজনকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়।
এরপর বেলা ৩টার দিকে ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জনের উপস্থিতিতে প্রিসাইডিং অফিসার কামরুল ইসলাম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনের জন্য সভা শুরু করেন।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ অভিভাবক সদস্য মহিউদ্দিন মঞ্জু ও মিজানুর রহমানকে বিদ্যালয়ের তৃতীয়তলা থেকে নিচতলা সভা কক্ষে নিয়ে আসার সময় জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুই অভিভাবক সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
আধাঘণ্টা পর হরিরামপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা তাপসী রাবেয়া এসে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ বহিরাগতদের বাইরে বের করে দেন। পরবর্তীতে প্রিসাইডিং অফিসার সভা শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে তিনি নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।
এদিকে ছাত্রলীগের হাতে দুজন অভিভাবক সদস্য প্রহৃত হওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদ রাজিদুল ইসলাম।
হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরেই সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের পক্ষের লোকজন ও পুলিশ ম্যানেজিং কমিটির ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে। নির্বাচনের দিন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্যের লোকজন দুজন অভিভাবক সদস্যকে মারধর করে। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় প্রিসাইডিং অফিসার নির্বাচন স্থগিত করেছেন।
এদিকে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নির্বাচিত সদস্যরা তাকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি নিজে ওই বিদ্যালয়ে সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। বিদ্যালয়ে দুর্নীতি ঠেকাতে হয়তো তার নাম প্রস্তাব করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ছাত্রলীগের হাতে স্কুলের দুজন অভিভাবক সদস্য প্রহৃত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু জানি না।