আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
পাবনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে চরম হট্টগোল এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন মনিরসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত মনিরকে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে শহরের লাহিরীপাড়ার জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতার সময় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় সমাবেশে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সমাবেশ পণ্ড হলেও স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং প্রধান অতিথি ও সভাপতির বক্তব্য শেষ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে পড়া পাবনা জেলা বিএনপির উদ্যোগে সোমবার বিকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ।
এ সময় শওকত মাহমদু তার বক্তব্যে বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে এই ব্যর্থ সরকারের পতন ঘটাতে হবে এবং পাবনা থেকেই সে আন্দোলন শুরু হবে। আপনারা চূড়ান্ত আন্দোলন সফল করার জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রস্তুতি নিন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আওয়ামী লীগের অবস্থা ভালো নয়। ইতোমধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে গিয়ে প্রার্থীরা বলছেন- ভবিষ্যতে ঝাঁটা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করব-তবু নৌকা নিয়ে নির্বাচন করব না।
দুলু বলেন, আপনারা সমাবেশ ঠেকাতে রাস্তাঘাট বন্ধ করে রেখেছেন, কিন্তু এ সমাবেশে আসতে ঠেকাতে পারেননি। আওয়ামী লীগের দিন শেষ হয়ে গেছে। আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে যদি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া না হয় তাহলে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করা হবে।
বিশেষ অতিথি দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ এমপি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে রোববার পাবনা সদর উপজেলার সব ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এতে বোঝা যায় দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তাই পুলিশ দিয়ে সরকারের পতন ঠেকাতে পারবেন না। পুলিশ ভাইদের বলছি আপনারা নিরপেক্ষ থাকবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের পতন শুরু হয়ে গেছে, তারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। তারা আমাদের জ্ঞানহীন জাতিতে পরিণত করেছে। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।
বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল রহমান চন্দন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা হাবিব, বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম সাজ্জাদ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ খানসহ স্থানীয় নেতারা।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে পড়া জেলা বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করতে দুপুর থেকে পাবনা শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ শেষে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হয়।
আগের সব কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে হলেও বিকাল ৫টার দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় সমাবেশ স্থলে আধিপত্য নিয়ে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন মনির গ্রুপ ও সাবেক জেলা ছাত্রদলের সম্পাদক সুইট গ্রুপের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এ সময় সমাবেশে চরম হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সমাবেশ স্থল থেকে নিরীহ নেতাকর্মীসহ আশপাশের মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন মনির ছুরিকাঘাতে আহত হন। এ সময় কমপক্ষে আরও ১০ জন আহত হন।
ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত মনিরকে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এরপর স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাসহ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে প্রধান অতিথি ও সভাপতি বক্তব্য শেষ করেন।