আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
অন্তর্বাসের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উচ্চ-মূল্যের পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের বিশ্বব্যাপী আপমার্কেট আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছেন। তারই অংশ হিসেবে নারীদের অন্তর্বাস খাতে নতুন করে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে।
এরমধ্যে একটি হলো অনন্ত অ্যাপারেলস। গত বছর মহামারি চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রামের একটি অত্যাধুনিক অন্তর্বাস কারখানায় ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা। এর মাধ্যমে সেখানে ৪ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
অনন্ত অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যে নিজেদের কারখানায় তারা আরও ২০টি নতুন প্রোডাকশন লাইন যুক্ত করতে যাচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ পোশাক তৈরির জন্য বিশেষ দক্ষতা, নকশা এবং অ্যাকসেসরি প্রয়োজন। এগুলোর জন্য প্রয়োজন মেশিন ও জনশক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
বিশ্বজুড়ে অন্তর্বাসের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাক প্রস্তুতকারীরাও এখন এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অভ্যন্তরীণভাবে কাঁচামালের চাহিদা মেটাতে তারা সিন্থেটিক কাপড়ের একটি সংযোগ স্থাপনেও এগিয়ে যাচ্ছে।
অনন্ত অ্যাপারেলসের এমডি বলেন, “আমরা মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমাদের অন্তর্বাস ইউনিটের জন্য কাপড় এবং লেস তৈরি করতে ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে একটি সিনথেটিক ফ্যাব্রিক প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা করছি।”
অনন্ত অ্যাপারেলস বর্তমানে বছরে ২৪ মিলিয়ন ব্রা এবং ১২ মিলিয়ন প্যান্টি তৈরি করছে।
হালকা পোশাক, আন্ডারগার্মেন্ট এবং ঘুমের পোশাক অন্তর্বাসের অন্তর্ভুক্ত। আকার-আকৃতি, অনুপাত নির্বিশেষে প্রতিটি নারীকেই মানিয়ে যায় এই পোশাক।
চরকা টেক্সটাইল লিমিটেড তাদের অন্তর্বাস আইটেমগুলোর উৎপাদন বাড়িয়েছে দ্বিগুণ।
সম্প্রতি মহামারির প্রভাব কমতে থাকায় বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের অন্তর্বাস কেনার চাহিদাও বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশি পোশাক-নির্মাতাদের কাছে অর্ডারের পরিমাণও বেড়েছে।
ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী চাহিদার মধ্যে, অন্তত ৫০ জন পোশাক উদ্যোক্তা হয় নতুন অন্তর্বাস ইউনিট স্থাপন করেছেন বা নতুন করে অন্তর্বাস ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন।
এ অবস্থায় দেশের রপ্তানিকারকরা বিশ্বব্যাপী অন্তর্বাসের বাজারে চীনের মতো একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরির আশা করছেন। বৈশ্বিক বাজারে অন্তর্বাস সরবরাহে ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা বর্তমানে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে।
বৈশ্বিক বাজারে অন্তর্বাস খাতে যেখানে মোট ৪২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের শেয়ার ৫১৮ মিলিয়ন ডলার। গত বছর দেশের শেয়ার ছিল ৩৫০ মিলিয়ন। কেনেথ রিসার্চ অনুসারে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাজার ৬২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আরএমজি উদ্যোক্তারা বলছেন, অন্তর্বাসের আইটেম, বিশেষ করে ব্রা তৈরির প্রক্রিয়া খুবই জটিল। এটি তৈরির জন্য ২৫ ধরনের অ্যাকসেসরি এবং অত্যাধুনিক জ্ঞানের প্রয়োজন। ফলে এই পণ্য উৎপাদনের জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করেছে তারা।
শরীফ বলেন, “শুরুতে যেখানে কর্মীদের দক্ষতা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়াতে আমরা বিনিয়োগ করতাম, সেখানে এখন আমরা ৫০ শতাংশেরও বেশি দক্ষতা বাড়াতে বিনিয়োগ করছি।”
“এই খাতকে লাভজনক করতে হলে কর্মীদের দক্ষতা কমপক্ষে ৬০ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
অনন্ত অ্যাপারেলসের এমডি শরীফ জহির বলেন, নতুন নির্মাতারা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করার কারণে লোকসান গুনছেন। সরকারের এই প্রতিশ্রুতিশীল খাতকে উৎসাহিত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বাস রপ্তানির জন্য যুক্তরাজ্যের একটি শীর্ষ অন্তর্বাস কোম্পানি কোয়ান্টাম ক্লোদিং গ্রুপের সাথে যৌথ উদ্যোগে অন্তর্বাস তৈরি শুরু করে দেশের এসকিউ গ্রুপ। এর আগে কোম্পানিটি সোয়েটার রপ্তানি করত।
২০১০ সালে গ্রুপটি কোয়ান্টাম ক্লোদিং এর শেয়ার কিনে নেয়। বর্তমানে তাদের ৫টি পোডাকশন ইউনিট রয়েছে।
এসকিউ গ্রুপের চিফ পিপল অফিসার ওয়ারিসুল আবিদ বলেন, এই খাতে চীনের পর বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। এই ধরনের পোশাক এবং উচ্চ-মূল্যের পণ্যগুলো তৈরির জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নকশা এবং ডেভেলপমেন্ট টিম। এছাড়াও শ্রমিকদের আরও দক্ষ হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কাঁচামালের উৎস এই বিভাগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, তারা লেস তৈরির জন্য একটি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। অন্তর্বাস তৈরির জন্য একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ লেস।
বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, “বিশ্বব্যাপী অন্তর্বাসের বাজারের একটি অংশ দখল করতে পারলে আমাদের রপ্তানি অন্তত কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়বে।”