আকাশ জাতীয় ডেস্ক:
স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে ১৩ দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের চড়ুইগদি গ্রামের মাসুদ রানা নামে এক যুবকের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী তরুণী। তবে ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও ওই যুবকের দেখা পাননি তিনি।
শুক্রবার ওই তরুণী সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, তার আসার খবরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাসুদকে লুকিয়ে রেখেছেন। যদিও মাসুদের পরিবারের লোকজন বলছেন, ঢাকায় ছেলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। সেখান থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ফেরেনি।
তরুণী সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমার পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে রাজশাহীর এক প্রতারক আমাকে বিয়ে করলে, পরে জানতে পারি যে বাড়িতে আরেকটা স্ত্রী রয়েছে তার। এরপরে তার সংসারে যাইনি। ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে একটি বিউট পার্লারে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে মাসুদের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে, রাজশাহীর প্রতাকরকে তালাক দিয়ে ১৬ এপ্রিল আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।’
তরুণী বলেন, দেড় বছর প্রেম ও বিয়ের পর তিন মাস সংসার ভালোই চলছিল ঢাকায়। হঠাৎ কয়েকদিন আগে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমাকে মারধর করে, বাসা ছেড়ে চলে যায় মাসুদ। সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আমার সঙ্গে। ভাড়া বাসার মালিক মারধরের ঘটনায় ভয় পেয়ে আমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। বাসা ছেড়ে দেওয়ার পর উপায় না পেয়ে স্বামীর বাড়িতে এসে অবস্থান নিয়েছি। আমি স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে এখান থেকে আমার লাশ যাবে।
এই বাড়িতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজনকে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অসংখ্যাবার চেষ্টা করেছে। আমি বের হইনি। চর থাপ্পড়ও মেরেছে। আমার স্বামী না আসা পর্যন্ত এখানে যদি মরতে হয়, মরব। ফিরে গেলে আমার মরদেহ যাবে। আমি যাব না।
মাসুদের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, মেয়েটি এসে আমার ছেলের বউ হিসেবে নিজেকে দাবি করছে। বিবাহের কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছে।কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে, বিয়ে করেছে আমার ছেলে। তবে ঢাকা থেকে মাসুদ না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
মাসুদের মা সুফিয়া বেগম জানান, মেয়েটিকে আমার পছন্দ হয়েছে। তবে শুনেছি, মেয়েটির আগে আরকেটা বিয়ে ছিল। ছেলে যদি তাকে নিয়ে সংসার করে, আমার কোনো আপত্তি নেই। এখানে আসার পর তার খাওয়া-দাওয়াসহ সব ধরনের যত্ন আমরা করছি। তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।
তরুণীর বাবা জানান, ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেওয়ার পর শুনেছি, মেয়ে ঢাকা থেকে চলে এসেছে। মেয়েটি মোবাইলে জানিয়েছে, তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য অভিযোগপত্র দিয়েছি। ঈদের পর বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আকালু (ডংগা) জানান, মাসুদের বাবাকে বলা হয়েছে দ্রুত সময়ে মাসুদকে বাসায় নিয়ে আসতে। ছেলে ফিরে এলে আগামী ২৫ জুলাই দুই পরিবারকে নিয়ে বসা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল জানান, মেয়েটির বাবা আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।