অাকাশ আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও সিনিয়র হোয়াইট হাউজ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার কাতারের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের একজনের কাছ থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পেতে ব্যর্থ হওয়ার পরপরই দেশটির বিরুদ্ধে শ্বশুরকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাপ দেয়া শুরু করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরপর ঘটা এ দু’টো ঘটনাকে যুক্ত করে দুয়ে দুয়ে চার মেলাচ্ছেন অনেকেই। বিশ্লেষকদের মতে, কুশনারের রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত বিভিন্ন লেনদেন এবং ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক ইস্যুজনিত জটিলতার মধ্য দিয়ে অন্তত এটুকু বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যেই অসংখ্য স্বার্থের অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রথম দিকে কুশনার ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্কের ৬৬৬ ফিফথ অ্যাভিনিউয়ে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। ওই সময় এত বেশি অর্থের বিনিময়ে একটি ভবন কেনা সেটাই প্রথম।
বর্তমানে ভবনটির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি অফিস স্পেস খালি আছে। নিউইয়র্ক টাইমসের দেয়া তথ্য অনুসারে, গত বেশ কয়েক বছর ধরে ভবনটি থেকে যে আয় হয় তা এর জন্য নেয়া ঋণ শোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এ কারণে কুশনার কোম্পানিজ এই মাল্টিমিলিয়ন-ডলার ঘাটতি বিভিন্নভাবে চাপা দিতে বা পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।কাতার-জ্যারেড কুশনার
২০১৫ সালে একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জোরেসোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, অন্যদিকে জ্যারেড কুশনার তার বাবার সঙ্গে মিলে ডকবতে থাকা প্রপার্টিটাকে বাঁচাতে চেষ্টা করছিলেন। একটা সময় বাপ-ছেলে মিলে কাতারি বিলিওনিয়ার শেখ হামাদ বিন আবদুল্লাহ আল-থানিকে (এইচবিজে) সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
দ্য ইন্টারসেপ্ট জানায়, আলোচনার পর এইচবিজে শতকোটি ডলারের এই প্রকল্পে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে রাজি হন। কিন্তু শর্ত রাখেন, প্রকল্পের বাকি অর্থ কুশনার কোম্পানিজকে নিজে নিজে যোগাড় করতে হবে।
বাকি অর্থের ব্যবস্থা করতে কুশনারের এই রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান চীনের আনব্যাং ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শরণাপন্ন হলে কোম্পানিটি চলতি বছরের মার্চের শুরুর দিকে ৪শ’ কোটি ডলারের নির্মাণ ঋণ দিতে রাজি হয়। কিন্তু নবগঠিত ট্রাম্প প্রশাসনের মাঝে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখে কয়েক সপ্তাহ পরই সরে পড়ে।
আনব্যাংয়ের সমর্থন হারানোর কারণে কুশনার কোম্পানি এইচবিজে’র দেয়া শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, কাতারের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র অনুসারে ওই বিলিওনিয়ার ঋণচুক্তিটি বাতিল করে দেন। তবে অন্য আরেকটি শর্ত বলেছে, তিনি চুক্তিটি আপাততঃ স্থগিত রাখেন।
যেটাই ঠিক হোক, এর অল্প কিছু সময় পরই গত ৫ জুন জঙ্গিবাদে মদদ ও অর্থায়নের দায়ে কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানালেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সম্পর্কচ্ছেদের কৃতিত্ব নেন। টুইটারে গর্বভরে বলেন, সৌদি আরবে সৌদি বাদশাহসহ বাকি ৫০ মুসলিম দেশের সঙ্গে আলোচনার সুফল এই অবরোধ।
প্রেসিডেন্টের এই অবস্থান টিলারসনকে হতবাক করলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর পেছনে জ্যারেড কুশনারেরই হাত রয়েছে। টিলারসনের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র থেকে দ্য আমেরিকান কনজার্ভেটিভ’কে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত যে ট্রাম্পের কাতার সম্পর্কিত মন্তব্যের বেশ কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রে আমিরাতের রাষ্ট্রদূত এবং কুশনারের কাছের বন্ধু ইউসুফ আল ওতাইবা নিজে লিখেছেন।
‘ওতাইবা জ্যারেডকে বুঝিয়েছেন আর জ্যারেড ট্রাম্পকে। কি একটা অবস্থা,’ বলেন ওই সূত্র।
তবে ওই সূত্রের বক্তব্য যদি পুরোপুরি সত্যিও হয়, তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় কুশনার সত্যিই কাতারের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে কথা বলতে রাজি করাতে চেয়েছিলেন কিনা। অবশ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মন্তব্য চাওয়া হলে জবাব দেননি ট্রাম্প জামাতা।